“প্লাম”— এই
ফরাসী শব্দটার ইংরিজি অর্থ – সেই পালক, যা গায়ে বুলোলে শিহরণ হয়। নামে লিটল
ম্যাগাজিন হলেও ‘রন স্লেট’-এর সম্পাদনায় এই ওয়েবজিনটি ইন্টারনেটে আছে কিছুদিন হল।
২০১২ জুলাই পর্যন্ত মোট ছ’টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবার ছ’জনের নির্বাচিত
কবিতা নিয়ে। “ড্যানিয়েল ললেস” গত বছর তার একটি প্রিন্ট ইসু সম্পাদনা করে প্রকাশ
করেছেন জুলাই ২০১২-এ, তার মধ্যে নির্বাচিত ১২ জনের এবং প্লামের আরো কয়েকজনের
স্বেচ্ছা-যোগদান মিলিয়ে। এটি আমার হাতে এলে আমি অবাক হই দুটি কারণে। (১) এখানে
বেশির ভাগ লেখাই মহিলা কবিদের, যা আমার অসাধারণ মনে হয়েছে। সিলভিয়া প্লাথ আর
ভার্জিনিয়া উল্ফ্ ছাড়া কোন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মহিলা কবির কথা স্মরণ হয় না চট
করে। আপনাদের মনে পড়ে কি ? (২) সব কবিই কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, যা
আমার থিয়োরির বিরোধিতা করছে। আমি বলেছিলাম – ‘অধ্যাপকরা
কবিতার শত্রু’।
আসুন পাওয়া যাক পালকের শিহরণগুলি।
ডোরিয়েন লক্স (১৯৫২)
(এই আমেরিয়ান কবি কলেজে পড়ান, ৫টি কাব্য
সংকলন আছে। ১১টি পুরস্কার পেয়েছেন এর মধ্যে। একটা পত্রিকা সম্পাদনা করে থকেন)
পালক ফালক
ঠেলাগাড়ির হাতল দুটো ফাঁকা মাঠ
কামানমুখো
তাক নিয়েছে তাকিয়ে আছে কাকে
সোনালীন জং রঙ জঙীন,
খালি পেটের জলে
শুধু বৃষ্টির জল,
তার বৃষ্টিপানির রূপালী বুননটি
দেখি ছেঁড়া, খাপছেঁড়া
হাওয়া তাকে চকমকিয়ে কাঁপিয়ে দিয়ে
যায়,
মাঠে গমক্ষেতে ঢেউ খেলিয়ে চলে
যায় গাছেদের কাছে।
তারপর শব্দেরা বায়ু বেয়ে পাতায়
ওঠে
সময়ের স্বর-নিখাদে, মর্মে জড়ানো
ভোলা দিনের মতো পলগুলো গুছিয়ে
তুলে,
ফেলে দিয়ে, খামখেয়ালে, বনতলে
তলে।
আর দূরে কোথাও বন পেরিয়ে একলা এক
কবি
তার নাসামান্য ঘরে ব’সে, কলম
কাঁদা পাতায়
লিখিতেছে নিঃসীম জীবনীর কথাগুলি
নিজেরই কাকলি গড়া ছোট মোট পথের
ভাবনা
মোমশিখা, ফেনিল বিয়ার, গমক্ষেত, মরচে
মাখা সূর্য –
লিখছে সেসব কথাদের যারা টিঁকে
থাকবে না।
---------
রি আর্মানট্রাউট (১৯৪৭)
(আমেরিয়ান ‘ল্যাঙ্গুয়েজ
পোয়েট্রি’ আন্দোলনের প্রথমকালের কবি। রন সিলিম্যান এবং রবার্ট ক্রিলি এর সুখ্যাতি
করেছিলেন। রি অ্যান্টি-লিরিকাল কবিতা লিখেছেন যা প্রথম পাঠে সহজ মনে হলেও গভীর
পাঠে একটা ভার্টিগোর আবর্ত তৈরি হয় – বলেছিলেন সিলিম্যান। দশটি কবিতার বই আছে তার। পেয়েছেন
পুলিৎজার ও ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কল সহ গোটা দশেক পুরস্কার।)
ফোকাস
বিন্দুটি
যার ওপর একটা
বিষয় বসবেই
তো তারই
রূপ নিরূপণে,
জায়গাটা
যেখানকার বিন্দু
একটাই
নিরূপণ করা চলে
বিষয়ের অবিষয়ে
এই ক্ষণটি জড়াতে চাও ?
ছুঁড়ে ফেলো।
জবারা
ভাবতে কি পারে
লালবেগুনি আবর্ত এক
চারপাশে।
------------
মেরি স্জাইবিস্ট (১৯৭০)
(আমেরিয়ান কবি। কলেজে অধ্যাপনা
করেন। একটি মাত্র বই আছে কবিতার। এবছরই তার দ্বিতীয় বইটি প্রকাশের পথে। এরই মধ্যে
সাত-সাতখানা পুরস্কার পেয়েছেন। ভাবা যায় ? ওদেশে পুরস্কার বৃষ্টি হয় নাকি ?)
৩৯ বরষী দেহের
প্রতি সুর
একঘেয়ে
কামনা(র)
চাকাসু
(প)রিহিত
(আমার) আপনা বর্ণহীন
(প্র)শমণ
(আমি) সর্বদা ভাবি থাক(তে)
সন্(তুষ্)ট
সবটা
বোকামি(ই)
(থে)কে যায়
বা ফাঁকা(নো)র
(বি)লম্ব
আন্তর গোলাপ(-এরা) দীপ্ত
গোলাপী এবং
কিছু লালও এখানে
(এ)বং সেখানে(ও)
ম(ন্থ)রতার
কালিমা
(আমি)
সাদা(ই)
--------
কিমিকো হান (১৯৫৫)
(জাপানী-আমেরিকান মা আর
জার্মান-আমেরিকান বাবার সন্তান কিমিকো এখন কলেজে অধ্যাপনা করেন। তার ৮টি সংকলন আছে
কবিতার। প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ফিল্মের গল্প এবং
চিত্রনাট্য লেখেন, সিনেমায় কথাও বলেছেন। এসব মিলে তার কবিতার ভুবন বদলে গেছে এক
অসামান্য চলনে যা সচরাচর দেখা যায় না।)
তৃতীয়
দৃশ্যান্তরঃ সময় থেকে
“ ‘সময়সুত্র বুঝে ওঠা মানুষের
পক্ষে সত্যিই বড় কঠিন’, ডাঃ জবারম্যান বলেছেন, ‘বুঝতে হলে আগেভাগেই জানা এমন কিছু
থেকে শুরু করতে হয় – যেমন, ঘটনার প্রকাশ-বিকাশ’।‘’
ফিতা
ফেরা
দিদিমার গলা,
ফিকে অন্ধকারের ফাঁকে কে কে জাগে
খুঁজতে গিয়ে চোখ কুঁচকে যায় -- -- -- --
পর্ণ শিরা
প্যাপিরাস
প্রস্তরলিপিঃ ঠিক তখনই গাছ থেকে নেমে এল সেই পার্সীটি,
মাথার টুপি থেকে ছড়িয়ে দিয়ে পূর্বদেশের চমক ছাড়ানো সূর্যরেখা
গাদা গাদা
শিরোনাম, যেমন -- “হৃদয় কহ-কহা”
পাখনা
একটা পরিচ্ছেদে নকল নিয়ে লেখার
কথা এবং কিভাবে তা আড়ালে রাখে সবকিছু ধ্ব’সে বা ফেটে যাওয়ার হাত থেকে
ফাদারের জন্য
স্বীকারোক্তি
গ্রন্থের বিষয়সূচি
এগুলো
শোকতালিকা, মেয়েটি জোর করল।
-- -- -- -- -- “(বি)জ্ঞানীরা নিশ্চিত নয়
ব্রেন কিভাবে সময়-সরণ করে,”
প্রথম দাঁত, প্রথম আক্কেল দাঁত
নোয়াস্ আর্ক নার্সারি স্কুলে
প্রথম দিন
প্রথম পিরিয়ড
ছোটদের ব্যায়ামাগারের ভেতর প্রথম
নাচ আর প্রথম চুমু – যা অবাস্তবই –
প্রথম ফ্ল্যাট, হাসপাতালের হালকা
সবুজ মাখা, আর গলির রাবিশ ডিঙিয়ে প্রবেশ
দ্বিতীয় ফ্ল্যাটঃ পথের খানিক দূরে একটা খুনের ঘটনার পর চীনা
পরিবারটি পশ্চিমের দু’কামরার ফ্ল্যাটটি ছেড়ে চলে যায় পরিষ্কার হবার জন্য
বর্তমান ফ্ল্যাটঃ প্রস্পেক্ট পার্ক থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে
হাচি নামের কুকুর প্রথমে -–
তারপর স্টেলা, এখন পঞ্চদশী
আমার প্রায় দমবন্ধ অবস্থাটা
বোঝাবার পর দ্বিতীয় পতিটি উঠে আসছেন
প্রথম সংকলনের সূচিপত্রেঃ শ্বাস বাড়াবার ঘর, বায়ুস্রোত, বাত-গহ্বর
প্রথম মৃত্যু (পায়রা)
প্রথম মৃত্যু (মা)
প্রথম ভাষা
প্রথম দাঁত – যেটা আমার সন্তানের, আমার নয়
তৃতীয় পতিটি বেশ মজার
“আগে মানুষের বিরামের সংক্ষিপ্ত মুহুর্ত
নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একইরকম প্রগতির চিহ্ন পেয়েছিল গবেষকরা। তুলনীয়
হল অনিয়মিত উদ্দীপকগুলো, যেমন গলার স্বরের ঝাঁঝ যা ব্রেনের আভ্যন্তরীন চালককে
দ্রুততর করে তোলে।“
সুপারমার্কেটের বাইরে নীল জিরাফে
চড়া নয়
পেটব্যাথা নয়
রান্নাঘরের কলে দিদিমা চুলও
ধুচ্ছে না
আরও, এক চামচ আইসক্রিম, পেস্তার।
জন্মদিনের কেক থেকে একটা দলা। শয়তানের খাদ্যই
বটে।
ট্রেনযাত্রা নয়।
চুল কাটা, তাও নয়।
স্নান --- সাদা টালি লাগানো
হোটেল বাথরুমে সাদা দেয়াল ও সাদা গাউন ও সাদা তোয়ালে এবং খুবই
জোরালো সফেদ নীরবতায় স্নান। পুরুষটি আমার
পিঠ ঘষে দিচ্ছে ---
ভোর চারটেয় আমি জেগে নেই
বৃষ্টিতে জুতোও সেঁকছি না
আরো, ঝড়ের মধ্যে ছাতার তলায়
বিদায় চুম্বনের দৃশ্য
(বজ্রনাদে কানে তালা লাগছিল না
?)
ঘুমের আগে জানলা দিয়ে তুষারপাত
দেখা, মৃদু শব্দে, শব্দ নরম হচ্ছে। ব্রুকলিনে আজ খ্রিস্টমাসের
সকাল
(জন্ম না) (জন্ম নয় ?)
“
নিজের হাতে ছেড়ে দিলে ব্রেন ফ্রেন সময়কে জড় করে ফেলতে চায়”
সুপ, কমলার রস, দুধ ------
একটা সসপ্যানে খাবার নেড়েচেড়ে সে
মেয়েটিকে চামচ দিয়ে খাওয়াচ্ছে। তাকে ভালবাসা তার রোমান্টিক। মেয়েটির প্রয়োজন ছিল
না রোমান্সের। “তবুও”, মেয়েটি অস্ফুটে বলল --- “মনে হচ্ছে যেন গতকাল”
OED
সহসাই সে দেখে তার শরীর টের
পাচ্ছে না সেই সব যা গতকালও সহজেই। এমনকি টি শার্টটাও তার
স্তনে আঁটছে না। আর
পুরুষটির হাতের মুঠো -----
অন্য ঘনতর অবস্থায় পরিমানে কমে
যেতে, বায়বীয়া ভাপ থেকে শুরু করে তরল অথবা কঠিন অবস্থায়, “সেই বিজ্ঞানীরা যারা এই
সম্ভাবনার কথা বলে, যে, তাদের তত্ত্ব অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে খাবারকে ঘন করে ক্যাপসুলে ভরে দেয়া
যাবে, আর খ্যাপার মতো ছুটে যায় পাগলা গারদে বা কবরখানায়” ----
( ---- হার্ভে
ডব্লিউ উইলি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস , মার্চ ৮, ১৯০৮ )
আমি থামতে চাইনি। আর, হ্যাঁ, আমি
কখনোই থামতে চাইনি।
চেপে ধর, মেলাও, --- হজম কর,
সংক্ষেপ, নিগূঢ়, সাংকেতিক কর
দুজনের জন্য এই সব তুর্কী
সামন্ত-কথা
“কালকের ব্যাপারটা শেষে কি হল ?”
“আর গতকালের ?” শরীর নির্জলা ---
“বাঃ বাঃ গতকাল -----“
---------